ছোেটাবেলাটা কেটেছে বইয়ের মধ্যে। বাড়িতে প্রচুর বই ছিল। রবীন্দ্র রচনাবলি থেকে শুরু করে বনফুলের গল্প - অনেক বই পেয়েছিলাম। যে বয়সে ডাঙ্গুলি আর মার্বেল খেলার কথা তখন খেলার সাথি আমার তারাশঙ্কর, বলাইচাঁদ, বিভূতির মতো বাঘা বাঘা লেখক, শব্দের খেলোয়াড়। সব কিছু বা এমনকি কোনো কিছুই যে বুঝতে পারতাম, তেমনটা ঠিক নয়। তবে ভালো লাগত। সঙ্গে আর একটা বই ছিল, 'চলন্তিকা' – বাংলা অভিধান। রাজশেখর বসুর সংকলিত এই অভিধানটা ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! কোনো শব্দ বুঝতে না পারলে সোজা রাজশেখর বসুর দরবারে! এই বইটা আমার কাছে এখনো আছে। আমার জন্মের আগে প্রকাশিত এই বইটাকে ছেড়ে আমি কিছুতেই থাকতে পারি না।
আগেই বলেছি, সাহিত্যিক হওয়ার মতো যোগ্যতা আমার নেই। তাই এমন স্পর্ধা না করাই ভালো। তাহলে এই বই প্রকাশ করা কেন? মূলত তিনটি কারণেঃ –
- একটি হলো, অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল নিজের একটি 'গল্পে'র বই প্রকাশ করার। সেই স্বপ্ন পূরণ করা। এখন পাঠকরাই বলবেন, এই 'গল্প'গুলো ঠিক কতখানি গল্প হয়ে উঠেছে বা আদৌ গল্প হয়েছে কিনা। সে দায়িত্ব আমি পাঠকের ওপরেই ছেড়ে দিলাম।
- দ্বিতীয় কারণ হলো, বাড়িতে বই থাকলেও মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কোনো বই ছিল না। একদিন এক বইয়ের দোকানে মানিকের একটি বই তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। তখন আমার বয়স তেরো চোদ্দ বা ওরকম কিছু একটা হবে। খানিকটা পড়ার পর ভালো লাগল। একটি গল্প শেষ করার পর মনে প্রশ্ন এলো, ইনি আবার কে? ইনি কি কিছু বলতে চেয়েছেন ওঁর গল্পের মাঝে? ঠিক তেমনি করে কোনো একদিন, আজ থেকে অনেক বছর পরে আমার এই বইটা হাতে নিয়ে কোনো এক কিশোর কিশোরী বলবে, "ভাষার কি ছিরি! বলার ধরণটা হয়তো আরেকটু অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু উনি কী বলতে চাইছেন?" এই প্রত্যাশায় বুক বাঁধলাম!
- আর তৃতীয় কারণ হলো, এই বইটা বিক্রি করে যদি কিছু টাকা পাওয়া যায় তাহলে তার সবটা দিয়ে ২০২৪-এর দুর্গা পুজোর সময় কিছু দুস্থ বাচ্চা ছেলেমেয়েদের জামাকাপড়, খেলনা ইত্যাদি কিনে দেওয়া।
পাঠকদের জন্য আর একটা অনুরোধ আছে আমার। গল্পগুলোকে গল্প হিসেবেই পড়বেন। সত্যি কাহিনী নয়। যেমন আমি কখনোই উত্তরপ্রদেশ যাইনি কিন্তু একটি গল্প আছে উত্তরপ্রদেশের পটভূমিকায়। এই কারণে নিছক গল্প ভাবলেই উপভোগ্য হবে, পড়তে ভাল লাগবে। অন্তত তেমনটাই আমার মনে হয়।
সব শেষে বলি, এমন একজনের কথা যাঁর সাহায্য না পেলে এই বই প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। তিনি গৌতম ঘোষ দস্তিদার যিনি এই বইটির সম্পাদনা করেছেন। তিনি পাশে না থাকলে আমার পক্ষে এই গল্পগুলোকে কিছুতেই দুই মলাটের মাঝখানে নিয়ে আসা সম্ভব হতো না। সম্পাদনা যে কী কঠিন এবং কতটা পরিশ্রমের কাজ সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি গৌতমদার সাহায্য পেয়ে। গৌতমদার স্নেহধন্য হয়ে ওঠাই এই বই প্রকাশের পুরস্কার আমার।
পাঠকদের কাছে আরও একটা অনুরোধ– গল্পগুলো পড়ে আপনাদের অনুভূতি আমাকে জানাবেন। 'ঋ' গল্পের শেষে আমার বৈদ্যুতিন ঠিকানা (ইমেইল) পেয়ে যাবেন। নমস্কার এবং ভালোবাসা নেবেন!