এই পুস্তক ক্রমের বিষয়বস্তু বাংলা ভাষার উৎপত্তির সাথে সম্পর্কিত নয়। এই পুস্তক ক্রমের মূল চরিত্র, নারু, 'বাংলা' নামক এক ভূখণ্ডের নামকরণের উৎস সন্ধানে এক জীবনব্যাপী যাত্রায় রত হয়েছিল। সেই যাত্রার বর্ণনা এই পুস্তক ক্রমের বিষয়বস্তু।
বাংলা শব্দটি শুধুমাত্র একটি ভাষার নাম নয়; এই শব্দটি প্রাথমিকভাবে একটি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ভৌগলিক অঞ্চলকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। বাংলা শব্দটির ভাষা হিসাবে প্রয়োগ সেই কাহিনীর দ্বিতীয় অংশ যার প্রথম অংশটি রচিত হয়েছে ভূখণ্ড হিসাবে বাংলার যাত্রার দ্বারা।
বাংলা নামে পরিচিত সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের দ্বারা ব্যবহৃত ভাষাকেও বাংলা নামে অভিহিত করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অনেক ভাষাও তাদের নাম গ্রহণ করেছে সেইসব অঞ্চলের নাম থেকে, যেগুলির বাসিন্দারা সেইসব ভাষা ব্যবহার করে।
এই পুস্তক ক্রমের কেন্দ্রীয় চরিত্র নারু। মাধ্যমিক শিক্ষার প্রথম দিক থেকেই নিজের জন্মস্থান, বাংলার সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন তার মনে উদয় হয়। তার মনে প্রথম যে প্রশ্নটি উদ্ভূত হয়েছিল, তা সম্পর্কিত ছিল ‘বাঙ্গাল’ শব্দের সাথে, যা বাংলা অববাহিকার পূর্ব ভাগের অধিবাসীদের নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। উত্তরের সন্ধানে, অর্থাৎ, তার মনে উপস্থিত উত্তরহীন প্রশ্নগুলির জন্য গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে, সে জীবনব্যাপী এক বৌদ্ধিক যাত্রা শুরু করেছিল। পূর্বে অব্যাখ্যাত সেই সমস্যাগুলি বাংলা নামে পরিচিত অঞ্চলের ইতিহাস, ভূগোল এবং বাংলার ধারণার সম্যক উপলব্ধি করার ক্ষেত্রেও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা সম্পর্কিত কয়েকটি শব্দ যেমন বাঙ্গাল, বঙ্গ, ইত্যাদির বহুল প্রচারিত যে ব্যাখ্যাগুলি পাওয়া যায় সেগুলি গ্রহণ করতে তার সমস্যা হয়েছিল। ‘বং’ হল সবথেকে মৌলিক শব্দ, যার উপর ভিত্তি করে অনেকগুলি শব্দ গঠিত হয়েছে।
সেই ভূমির পরিপ্রেক্ষিতে ‘বঙ্গ’ শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু ব্যাখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়, কিন্তু সেই সব ব্যাখ্যা আরও নতুন প্রশ্ন উত্থাপনের পথ প্রশস্ত করে। বাঙ্গালী বিদ্বান সমাজের অনেক সদস্যই অনুভব করেন যে ‘বঙ্গ’ শব্দটির সাথে ‘বং’ শব্দটির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেই দুটি শব্দের মধ্যে দ্ব্যর্থহীন এবং যুক্তিপূর্ণ একটি সংযোগ স্থাপন করে এমন কোনো সূত্র আজ অবধি প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
তার বৌদ্ধিক যাত্রায় সে ‘বঙ্গ’ এবং ‘বাঙ্গাল’ শব্দ দুইটির অশ্রুতপূর্ব অথচ যুক্তির দিক দিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়।
এর কেন্দ্রীয় চরিত্র নারুর যাত্রার সাথে, এই পুস্তক ক্রমের পাঠকগণ বহু শতাব্দী ব্যাপী এক যাত্রায় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেতে পারেন। সেই যাত্রা একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের সৃষ্টি ও বিকাশের চিত্রণ করে, এবং এক নতুন আলোকে সেই ভূগোলে মানবসমাজের বসতি স্থাপনের ক্রমপর্যায়ের ধারণা প্রদান করে, যে ভৌগোলিক অঞ্চল বর্তমানে 'বাংলা' বা 'বঙ্গ' নামে পরিচিত।
শেষ পর্যন্ত, নারুর যাত্রা, বাংলা এবং ভারতের রহস্যময় অতীতের সমাধানের অভিমুখে এক দুঃসাহসিক ও রোমাঞ্চকর যাত্রায় পরিণত হয়েছিল। ক্রমে ক্রমে তার যাত্রা ভৌতিক ক্ষেত্র হতে স্পর্শাতীতের, প্রত্যক্ষ হতে অপ্রত্যক্ষের, মূর্ত প্রমাণ হতে কিংবদন্তির, এবং কিংবদন্তি হতে পৌরাণিকের দিশায় অগ্রসর হয়েছে। বিস্মিত হয়ে সে দেখেছে যে পৌরাণিক বর্ণনা হতে কিংবদন্তি হয়ে বর্তমান সময়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রমাণসমূহ একটি অবিচ্ছিন্ন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছে।