বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে নানান দিক থেকে যেমন পরিপূর্ণতা, প্রাচুর্যতায় ভরিয়ে দিয়েছে, ঠিক তেমন বহু ক্ষেত্রে অভিশাপ হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের দুয়ারে। যেই প্রসঙ্গে সবার পূর্বেই পারমানবিক বোমায় জাপানের দুইখানি নগরের ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার বিষয়টার কথা উল্লেখ করা যায়। সেই সাথে আরেকটা দিনের কথাও মনের মধ্যে উঁকি মারে ২৬ এপ্রিল, ১৯৮৬। যেই রাতে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এক বিস্ফোরণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এই রাতে সেখানে প্রাণ হারায় অগুনতি মানুষ। পরবর্তী সময় পরিত্যক্ত এক নগরীর রূপ নেয় চেরনোবিল তথা প্রাপায়াত নগরী। চেরনোবিলকে নিয়ে অতীতে তথ্য সমৃদ্ধ বহু পুস্তক প্রকাশিত হলেও সেই হাড়হিম করা আবহের প্রতিফলন কিন্তু প্রায় ব্রাত্যই রয়ে গেছে গল্প উপন্যাসের পাতায়। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যে তো বটেই। এখানেই এই উপন্যাসের রচয়িতার কৃতিত্ব, তিনি একাধারে যেমন চেরনোবিলকে ইতিহাসের পাতা থেকে প্রায় অবিকৃত ভাবে তাঁর উপন্যাসের মধ্যে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি সেই কাহিনীর সাথে জাল বুনেছেন ভয়াল ভয়ংকর এক চিত্তাকর্ষক পটভূমিকার। যেই উপন্যাসের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে একটি শব্দ 'রহস্য'। শুধু রহস্যই বা কেন? প্রেম, ভালোবাসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান সবকিছুই মিলে মিশে গেছে এই উপন্যাসের মাঝে। লেখকের প্রাণবন্ত বর্ণনার সুবাদে এই উপন্যাসের পাতায় চোখ রেখে আপনি অনায়াসেই হারিয়ে যেতে পারবেন ইউক্রেনের সেই অভিশপ্ত স্থানে। যেখানে তেজস্ক্রিয়তাজনিত কারণে আজও সেভাবে মানুষের পদচিহ্ন পড়ে না বললেই চলে। তবে শুধুই কি তেজস্ক্রিয়তার কারণে? নাকি সেই সাথে রয়েছে তমসাবৃত আরও কোন অন্ধ অতীতের হাতছানি, যেখানে এসে বিজ্ঞানও থমকে গেছে এক গোলকধাঁধার মধ্যে? চেরনোবিলের মর্মান্তিক বিস্ফোরণ কি শুধুই ছিল এক দুর্ঘটনা ? নাকি এর সাথে জড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর কোন ষড়যন্ত্র? সেই বিষয়টাকে উপন্যাসের আঙ্গিকে জানতে হলে আপনার একবার পড়ে দেখতেই হবে 'আজও কাঁদে চেরনোবিল'